সকল প্রশংসা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের উপন্যাসের প্রথম পৃষ্ঠা:
‘আমরা নিমকহারাম না। স্থূল চর্বির প্রতিটি কণার কসম, ইংরেজি ভাষার প্রতিটি বর্ণের কসম, ডলারের প্রতিটি নোটের কসম আমরা নিমকহারাম না। আমরা ভ্যারিয়েশনে বিশ্বাসী, কিন্তু তাঁর কৃতিত্ব-স্বীকৃতিতে এক-স্বীকারবাদী—
যিনি নৌবহর-সিআইএ দিয়ে আমাদের জীবনরক্ষা করেন, যিনি এফডিএ দিয়ে আমাদের অন্নদান করেন, যিনি বিশ্বব্যাংক দিয়ে আমাদের পরিত্রাণ করেন, যিনি আইএমএফ দিয়ে আমাদের পরিত্রাণের পারদ পর্যবেক্ষণ করেন, যিনি এফবিআই দিয়ে আমাদের অন্দরমহল তদারকি করেন, যিনি ন্যাটো দিয়ে আমাদের সামরিক নিরাপত্তা প্রদান করেন, যিনি আইএসএএফ দিয়ে তালেবান-আল-কায়েদা থেকে আমাদের সুরক্ষিত করেন, যিনি এশিয়া এনার্জি দিয়ে আমাদের বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান করে লোডশেডিঙের অন্ধকার থেকে আলোর পথ দেখাতে চান এবং পাবলিকের ধাওয়া খেয়েও চিরবিদায় না নিয়ে নিজের নাম বদলে নবতর ছদ্মনাম ধারণ করে আবারও রাজস্ব বৃদ্ধির লোভনীয় স্বপ্ন দেখান, যেকোনো তুল্যেমূল্যে আমরা তাঁরই নাম জপি।
অতএব, বিনাবিচারে-নির্দ্বিধায় আবশ্যিকভাবে প্রশংসা শুধুই তাঁর।’

অন্ধ জাদুকরের বক্তব্য শুনে সমবেত হর্ষধ্বনিতে আকাশ-বাতাশ প্রকম্পিত হয়। দু’ভাগে বিভক্ত কুকুরের দল ঊর্ধ্ব গগনে লেজ তাক করে সমস্বরে চিৎকার করে ওঠে— ‘আঙ্কেলের জয় হোক! আঙ্কেল স্যাম জিন্দাবাদ! সাম্রাজ্যবাদ দীর্ঘজীবী হোক!’
এরপর ডান ও বামদিকে লেজ নাড়িয়ে অন্ধ জাদুকরকে কেন্দ্র করে ঘুরে ঘুরে নাচতে থাকে।


সকল প্রশংসা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের
ধরন: উপন্যাস
লেখক: সাম্য রাইয়ান
প্রচ্ছদ: রাশেদুন্নবী সবুজ
প্রকাশক: ঘাসফুল, ঢাকা
মুদ্রিত মূল্য: ৩৬০টাকা
হোম ডেলিভারীর জন্য: 01729680908

❏ সাম্য রাইয়ান

ঘ্রাণ শ্রুতি স্পর্শ সব গেছে
বাড়ির দক্ষিণে সোনালুর গাছ
দিগন্তদুপুরে
স্মৃতি ও পথিক
চলে গেছে অজানা গন্তব্যে।

গাভীর শরীরে ছোপ ছোপ
অন্তহীন অপমান!

দ্বন্দ্বে
কিছু মসৃণতা ছিলো।

অগ্নিরঙিন
সন্ধ্যার মুখে
আমার দিকে তাকিয়ে
হাসছে আমারই শব
অথবা স্বয়ং—
মিশছে মাটিতে
প্রেম-প্রতারণা
তার সাথে আমাদের
সমবেত আর্তনাদ।

পাহাড় নিবিয়ে দাও আলো।

বিষম অন্ধকারে 
ক্ষতিপূরণের আবেদন
সহজ অভ্যাসে জ্বলে 
মুছে যাক।

পিতার পাশে
অনুপ্রাসে
পায়ে হাঁটা পথ
দুরূহ ভীষণ

সহস্র দিকচিহ্নের মুখোমুখি
দিকশূন্য মুসাফির
মায়ের চুড়ি-কণা জাপটে ধরে
অন্তিম দুঃসাহসে।

রাজার ধর্ম খোঁজ। প্রশ্ন করো তাকে—
দুধে-ভাতে স্বপ্ন দেখিয়ে
ভক্তির ছলে ভাঙছে আমাকে।

পেটে ও বাড়িতে 
একসাথে 
আগুন জ্ব’লে শেষ।
জীবিত ঠিকানাহীন
মৃতের জন্য দেশ!

দূরের হাওয়ায় দেখি শান্তি টলোমলো
নির্বিকার নদী, আমার সাথে চলো।

ভাঙলো প্রাচীন বাড়ি। ভাগ হলো
যৌথপরিবার, স্বজন-বন্ধু-চেনা প্রেত।
আমিও চেয়েছি ভাঙন
আলাদা করতে ক্ষুধার থেকে পেট।

একটাই দিন, একটাই আলো, অগণিত সুর
একটাই রাত, একটাই হাওয়া, প্রকৃতি বিমূঢ়।

রক্তের স্রোতে বৈঠা ছুঁড়ে মারো।

দাঙ্গা ও জবা কী ভাবে ফোটে
কে কাকে ফুটিয়ে তুলতে চায়?

সারাদিনরাত 
নিঃসঙ্গ সুবোধ,
হাসিহীন চিৎকার 
চোখেমুখে ক্রোধ।

কেন সে হাসে না আজও সরকারি কৌতুকে?

বোধ’য় জানে না আইন; নোটিশ পাঠিয়ে দাও।
আরো যত বুদ্ধি আছে—বরাবর প্রয়োগ করো
তলপেটে লাথি
অথবা কাতুকুতু দিয়ে
বেজার ছেলেকে হাসাতেই হবে।

এই শীত বার্তাবহ—এই মিনার
অস্ফূটে পৃথিবীর নতুন কোলাহল

বাক্য-স্বাধীনতায়
নিদ্রা ভাঙে আদিম পদ্ধতিতে।
মনে মনে আমিও শিশুতর
রাতের মুহূর্তে জ্বালিয়ে দিচ্ছি অন্ধকার।

শাস্তির কথা অন্তহীন ভেবেও জেগেছি
মহানীরবতায়, মুছে দিচ্ছি ঘুম থেকে
রাতের পাহাড়। জীবনের মানে বুঝতে 
আমি জন্মাবো কতবার? তোমার কাছে
যেতে কোন উছিলা লাগে না, শবের 
মগজে জাগে প্রেম—মূল্যহীন মূল্যমানে।

আমি কি পরিচয়হীন, যখন যুগান্তরেও
‘মাতৃপরিচয়ে স্থির’? এত বধিরতা—বিপুল 
আলোতে মুগ্ধতা নেই তার। কিছুই না শোন 
যদি, সামান্য তাকাও—যেটুকু অন্ধকার।

এখন কিছুটা রোদ, অপলক শব্দ
খুব সামান্য ঋতু দেখা যায় 
আরোগ্যপ্রাপ্ত বীর গুপ্তঘাতকের
দৃষ্টি এড়িয়ে নিক্ষিপ্ত হচ্ছে বনে

দিনেদুপুরেও জ্বলে ওঠে দাঁত
কথা বলে প্রসঙ্গ বদলে দেয়

পাশের বাড়িতে মৃত এক শ্রেণি
অন্য আওয়াজ তুলে
অপ্রসঙ্গের পাশে ডাকছে আমাকে

জানি সে রক্ত থামাতে পারবে না—
তবু মনুষ্যজন্ম স্বীকার করি তার।

গ্রহণ করবো কী করে কুয়াশা-পরিচয়
ক্রমধাবমান শোকে ও বিচ্ছেদে 
পরিত্যাক্ত রাত জাগে অবেলায়।

ফিরতে চাই না আমি
ফিরে ফিরে আসে সকালের রোদ।

যাদের দেখি না অনেকদিন—পথচলতি বন্ধু
মুখচেনা লোক, সন্ধ্যাতারাটি; খবর জানি না
তাদের, না দেখে চিন্তা করি। অথচ ছিল না খুব
চেনা-পরিচয়। এই পরিণাম নির্বাক গ্রহণ করেছি।

সব কথা অস্পষ্ট খুব, সাময়িক।
মৃত্যুচিহ্নের মতো চোখের অন্তিম 
কালি—ভাসমান মেঘের শামিয়ানা
বাক্ স্মৃতিতে থাকে শুধু চিৎকার
সবার জীবনে বাঘের সাক্ষাৎ ঘটে না।

হৃদয়ের নয় পৃষ্ঠাজুড়ে আমাদের মুক্তির ইশতেহার
ব্রহ্মপুত্র ডাকে মহাজাগতিক সুরে, নৃত্যরত পাহাড়।

কারাগারে বন্দি করবে নদী! আগামী আষাঢ়-শ্রাবণে
বর্ষার গৃহবন্দি দিনে ছিন্ন মাথাগুলো জানাবে অস্তিত্ব।

অলিন্দে অচেনা শাবকের শিসটুকু চিনে রাখি
স্বনিভৃতি ভাঙবে আকাশে—ইতিহাসের পাখি।

দিক-ভুল-করা সন্ধ্যা-শ্রাবক যদি পায় আত্মপরিচয়
বড় রাস্তার অবহেলাপাশে এটুকুই ফুলের গৌরব।

ঘুমিয়ে পড়েছি বিশ্বস্ত মানচিত্রে
ঘাটে এসে ভেড়ে কলম্বাসের নাও

ম্যারিনেট-মাংসের সুবাস, কাঁচা রক্তের।
শীতল। এগুলো হরিণ না কি মানুষের?

বুকের উপরে থরথর ধাতু
একা পেয়ে নিঃস্ব করেছে 

গুলিও সমান প্রতিভা
রক্তক্ষতস্রোতে
যে শিশু আতঙ্কে বধির
সে-ই জাতিস্মর—
ভেঙে দেবে মবের প্রাচীর।

১০
উদ্ধত বন্দুক তুমি ধার্মিক নাকি ধর্মহীন?
এত রক্ত গিলেও কেন চেহারা মলিন!

এবার কী নাম দেবে আমার
সংখ্যালঘু, সর্বহারা নাকি নাস্তিক?
তোমার গুলির মাপে কোনটা সঠিক?

যে দিল শাঁখের ধ্বনি অথবা আজান
হত্যা করো না তাকে জ্বলজ্যান্ত প্রাণ।

আমারও ধর্ম ছিলো, হাজার বছর ধরে।
রাজার সেনা, তুমি বুঝবে না
                     কিছু নেই ক্ষুধার উপরে।

❑ সাম্য রাইয়ান

রাজসিংহ ঐক্য চায় হরিণের সাথে
চিতাবাঘ জানিয়েছে সংহতি তাতে৷
বজায় রাখতে হবে ঐক্যের ধারা
প্রয়োজনে নেকড়েও দেবেন পাহারা৷

বানরও রাজার সাথে মিলিয়েছে সুর
কথা শুনে মনে হয় বীর বাহাদুর!
শেয়াল লিখে দিলো রাজার বক্তব্য
বনের পশুরা পেল নাগরিক কর্তব্য৷

সামাজিক নেকড়েটা জানাল চিৎকারে
পশুশক্তি প্রতিষ্ঠা হবে বনে ও বাদারে৷
ঘোষিত হল পশুঐক্য বাধ্যতামূলক
এই দেখে সিংহের হৃদয়ে পুলক!

বনে ফিসফাস-গুঞ্জন, এ কী মহামারী
মহিষ পালিয়ে বাঁচে, ছাগল আনাড়ী৷
ঐক্যের হাত থেকে পাখিরা বেঁচেছে
মহানন্দে শকুন-চিল উড়েই চলেছে!

সিংহদুয়ারে এসে কড়া নাড়ে বাঘ
গুহার দরোজা ঠেলে সিংহ অবাক৷
সত্যিই মিটে গেছে অতীতের রেশ
এইবার একসাথে খাওয়া হবে বেশ৷

বনের প্রাণীকুল হরিণ থেকে বানর
সবাই সমান পাবে বাঘের আদর৷
সবার প্রতি সিংহের সমভালোবাসা
এইবার নেকড়েও মেটাবে পিপাসা৷

❑ সাম্য রাইয়ান

আজকের কবিতা কি শুধুই দেখতে দেখতে যাওয়া, অহেতু ন্যারেটিভ, তার সাথে খানিকটা বিস্ময়বোধ, না কি শতবর্ষ ধরে চলমান সেই চিরচেনা প্রেমার্তি— বাঙলার দৃষ্টিকর্ণহীন লেখককূল যা মাথায়-কাঁধে বহন করে চলেছে পরম ভক্তিভরে! সেই শব দ্বারা এ বিপুল-জটিল পৃথিবীর সাথে সংযোগ স্থাপন করা যেতে পারে কি? মাধ্যাকর্ষণের বিস্ময়রেখা পেরিয়ে সংযোগ ঘটতে পারে ভেনাসের সাথে? যেমনটা জয় গোস্বামী মনে করতেন, “আমাদের এই পৃথিবীর অনেক ওপর আকাশে ভেসে থাকে ওজোনোস্ফিয়ার। তাকে তো আমরা চোখে দেখতে পাই না। সূর্যের থেকে আসা ক্ষতিকর রশ্মি যে নিঃশব্দে শোষণ করে চলে। পরিশুদ্ধ করে দেয় আমাদের প্রতিদিনের আলো। কোনও কোনও গান, কোনও কোনও কাব্য, চিত্রকলা এইভাবে আমাদের সভ্যতার মন পরিশুদ্ধ করে চলে। ক্ষত উপশম করে। দূর থেকে করে বলেই আমরা বুঝতে পারি না।” সেই ধরনের কবিতা কিংবা চিত্রকলা কিংবা সুরই সভ্যতার আরাধ্য। লাখ লাখ পৃষ্ঠা আবর্জনা লিখে যেমন পরিবেশ বিপর্যয় ব্যতীত কোনো লাভ হয় না, তেমনি কখনো কখনো একটি পংক্তিও প্রাণ-প্রকৃতির উপশমে ভূমিকা রাখতে পারে।

সময়ের বাস্তবতা লেখকের কল্পনার অধিক জটিল, সেই বাস্তবতার রূপায়ন ততোধিক জটিল। সেই জটিল সময়ের অনন্য রূপকার রাশেদুন্নবী সবুজ। সময়ের চিত্র তিনি রচনা করেন রূপক, প্রতীক, উপমার কালিতে। তাঁর কবিতা নতুন চিন্তাকল্পের সূত্রমুখ নিয়ে উপস্থিত হয়। নতুন ডাইমেনশন, বিকল্প আলোকায়নের সন্ধান হাজির করেন অনায়াস সাবলীল ভঙ্গিতে। প্রেমের কবিতা অতি প্রাচীন ও বহুচর্চিত বিষয়। ‘প্রেমের কবিতা’ নামেই প্রকাশিত হয়েছে অসংখ্য কবিতা ও কবিতাবই। কিন্তু এমন নাম কি চোখে পড়ে, যেমনটা কবি রাশেদুন্নবী সবুজ লিখেছেন, “এটি একটি প্রেমের কবিতা হতে পারতো”! নামের নতুন ব্যঞ্জনা বুঝিয়ে দেয়, এটি প্রেমের কবিতা হয়ে উঠেও শেষমেশ হয়নি; যেন ঠিক না হয়ে ওঠা প্রেমের মতো, কিংবা পূর্ণতা না পাওয়া প্রেমের মতো। কবিতাটি শুরু হচ্ছে ‘টাইটানিক’ রূপকের আশ্চর্য ব্যবহারের মধ্য দিয়ে,
টাইটানিক প্রত্যয় ছিলো আমার উপর তোমার।

শতাব্দী পেরিয়ে গেলেও টাইটানিক এখনো অনেকের কাছে স্বপ্নের জলযান। যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে হাজারও স্মৃতি, প্রশ্ন, কৌতুহল আর স্বপ্নভঙ্গের গল্প। প্রত্যাশার ব্যাপকতা- শক্তিমত্তা বোঝাতে মাত্র একটি বাক্যে কবি টাইটানিককে হাজির করে দ্বিতীয় বাক্যেই লিখছেন স্বপ্নভঙ্গের কথা, যার ব্যাপকতা টুইন টাওয়ারের সমান!

সত্যের সামনে দাঁড় করাতেই তুমি ভেঙে পড়লে টুইন টাওয়ারের মতো

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের টুইন টাওয়ার ভবন বিদ্ধস্ত করার ঘটনাকে শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, গোটা বিশ্ব চমকে গিয়েছিল ঘটনার ভয়াবহতায়। টাইটানিকের মতো বিশালতা যে প্রত্যাশার তা ভঙ্গ হলে যে ধ্বংসস্তুপ তৈরি হয় তা টুইন টাওয়ার ছাড়া অন্য কিছুর সাথে তুলনীয় হতে পারে কি? অন্য কোনো উপমা দ্বারা এ অনুভূতি প্রকাশ সম্ভব?

এরপর স্মৃতির বিবরণ দু’বাক্যে, যার অন্তর্নিহিত বাস্তবতা ব্যাপক-বিস্তৃত। কবি লিখছেন,
মিগ টোয়েন্টি নাইনে মন ছুটতো তোমার পাড়ায়, ভেঙে দিলে পাড়াটা বেবিলনের শূন্যদ্যানের মতো।

সোভিয়েত ইউনিয়নের তৈরি মিগ টোয়েন্টি নাইনের বৈশিষ্ট্যের দিকে নজর দিলেই পাঠক বুঝতে পারবেন এই রূপকের মধ্য দিয়ে কবি মনের ছুটে চলাকে কতখানি বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করে তুলেছেন। এরপরেই ছুটে বেড়ানো সেই পাড়া, যা ভেঙে পড়ে বেবিলনের শূন্যদ্যানের মতো। যে উদ্যান ৫১৪ খ্রিষ্টাব্দে পারস্য রাজ্যের সাথে এক ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়েছিল।

এর পরই কবি লিখছেন সকল চোখ এড়িয়ে সংঘটিত সেই চুমুর কথা,
কৃত্রিম উপগ্রহে ধরা পড়েনি আমাকে দেয়া তোমার প্রথম চুমু

কৃত্রিম উপগ্রহ কীভাবে ছায়াপথ থেকে পৃথিবীর অব্যাহত পর্যবেক্ষণ করে চলেছে সে বিষয়ে আমরা জানি। সেই পর্যবেক্ষণও এড়িয়ে গেছে সেই চুমুটি, যা ছিলো প্রথম প্রেমের চিহ্ন-সলজ্জ, আড়ষ্ট, আড়ালপ্রিয়।

সেই প্রেম পরিণত হয় বিচ্ছেদে। দ্বিতীয় অনুচ্ছেদের সূচনা করেন এভাবে,
তোমার ভালোবাসা পাওয়া পাঞ্জাবিটা ব্রিটিশ মিউজিয়ামে স্থান করে নিয়েছে।

থাকে শুধু স্মৃতি- প্রেমে, অপ্রেমে! প্রেম না থাকলেও সেই স্মৃতি ফেলনা নয়, নয় পরিত্যাক্ত-তাই তার জায়গা হয় পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ ব্রিটিশ মিউজিয়ামে, যাতে তা দর্শনের সুযোগ ঘটে অন্যদের! ভাবনায় বৈচিত্র্য দেখে অবাক না হয়ে উপায় নাই। কবি চাইছেন, সেই স্মৃতিসমেত মানুষটিকে লোকে জানুক রোমিও-জুলিয়েট, লাইলি-মজনু কিংবা ‘খুনি শাহজাহানের’ মতো করে। শেষ উপমায় কবি প্রচলিত ইতিহাসের কাউন্টার দিয়েছেন। যে সম্রাট পরিচিত প্রেমের নিদর্শন ‘তাজমহল’ নির্মাণের জন্য, তাকে কবি খুনি হিসেবে চিহ্নিত করছেন। কেননা সম্রাটের রয়েছে প্রেমহত্যার অগণিত আড়ালে থাকা ইতিহাস। আগের দিনের রাজা-বাদশাহরা গৃহপালিত লেখক কবি পুষতেন। তাদের কাজ ছিল রাজাদের গুণকীর্তন প্রচার করা। তারাই রাজা-বাদশাহদের গুণকীর্তন লিখতো, প্রচার করতো। ইবনে খালদুন বলেছিলেন, “একটি জাতির সঠিক ইতিহাস ঘটনার ১০০ বছর পরে সঠিকভাবে রচিত হয়।” এখানেও তা প্রযোজ্য। দীর্ঘকাল পর সম্রাট শাহজাহানের সেই চাপা পড়া রূপ বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে, আর তারই উপস্থাপন ঘটেছে এই কবিতায়। কবি কি চাইছেন, শতবর্ষ পরে ‘প্রেমিক শাহজাহান’-এর ‘খুনি’ রূপ যেভাবে সামনে এসেছে সেভাবেই স্মৃতিজড়ানো পাঞ্জাবীর গল্পটি লোকে জানুক?

কবিতার শেষ পংক্তিটি যেন মনে করিয়ে দেয় রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহর আকাশের ঠিকানার কথা। তবে রাশেদুন্নবী সবুজের আহ্বানে যোগ ঘটেছে প্রযুক্তির; বিজ্ঞান-প্রযুক্তির বিকাশের এ কালের সার্থক প্রকাশ ঘটেছে এখানে,
ডব্লিউ ডব্লিউ ডব্লিউ ডট মেঘবালিকা ডট কম-এ ঠিকানায়।

❑ সাম্য রাইয়ান

নিবন্ধিত রিকশার পিছে
মনে মনে ভেসে যাচ্ছিলাম
যেখানে আমি নাই, সেখানেও
সামান্য নিঃশ্বাস ছিলো আমার৷

প্রমাণ চাইলে ফাটল দেখাতে পারি
রক্তহীন আঁচড়, ডোরাকাটা৷

বিকেলবেলার লম্ফন— সেই থেকে
উড়ছি, অসম্ভব আলো আর আলেয়া
দ্যূতিহীন ধুকে ধুকে, নির্লিপ্ত বৃষ্টির দিকে৷

❑ সাম্য রাইয়ান 

অর্ধেক জীবন গেল
তোমার দিকে চেয়ে,
বাকি অর্ধেক
তোমার কথা ভেবে!

❑ সাম্য রাইয়ান 

কিছুটা অট্টহাসি ছড়িয়ে দিলাম
ফল-বাগানের মাঝে৷ ফল ও ফলান্ধের
রইলো শুধুই বিবাহ-বিষয়-সংলাপ৷

চিন্তাগাছের জটিলতা বাড়ে শ্লথ গতির আয়ে৷
রোজ লোডশেডিং আর আগুনের উল্লাস
অশ্রুবিভাবে ভাসে রোজকার প্রতিবেশী৷

প্রাণপন অন্ধকার৷ ঐশ্চর্য ও শক্তির প্রার্থনা৷
পদতলে যুক্তির অতীত, অমান্য অপরাধ৷
তবু ভালোপ্রেম— যেন দীঘল জীবনের কোলে,
বেঁচে থাকে সুর, কাঁঠালচাপার মুখরতা!

❑ সাম্য রাইয়ান 

তামাম দুনিয়া হাতে ঘুরপাক
করে পিংপং একা ম্যাজিশিয়ান

কৈকুড়ির শেষ বেলার লোকে
নিখিল পথের পাশে
সরিষা বাগান, সবুজ পালং
অপত্য পাগলামী, আমাদের
নিজস্ব কথার প্রণালী

ক্ষান্তিহীন ছুটে যায় সে হেঁটে হেঁটে
গার্হস্থ্য রঙসব অনুগত পিছে পিছে

শত পিছুটান যেন
তাঁবু বাঁধা রশি টানটান
এত বাতাশ
তাতে জলাধার করে আহ্বান

উন্মাতাল ঢেউয়ের বুকে
দ্বিধায় ঝরে পড়ে পাতা
নাচে মাতাল, নাচে প্রতিবেশ
সাথে ম্যাজিশিয়ান।

❑ সাম্য রাইয়ান 

নিরাকার—জলের সাইরেন৷
এলো আমফান—সাফোর 
কলোনীতে৷ বৃষ্টিবৈভবে জেগে উঠি৷
শব্দ হয়৷

নিউটন, আপেলতলায় থাকো৷
বাড়িতে যেও না৷

বাড়িতে হৃদয় নেই৷
মানুষভর্তি বেদনা৷

❑ সাম্য রাইয়ান 

বিকেলের মগ্ন নির্জনতা পেরিয়ে
অবিচ্ছিন্ন শেকড়তম উচ্ছ্বাসে, মোহে—
প্রতিফলিত হই চিত্রনদীর তীরে৷
সেইখানে মস্তিষ্কের মতো বিক্ষিপ্ত
কলহআয়োজন পরিণত হয় তুমুল তরলে৷

বিগত সমুদ্র যেমন সাক্ষ্য দেয় অন্তঃসার সমারোহ—
চিন্তাতোড়ন কৌশলে 
চলে ঘুমহীন পথে রিক্সা,
কেবল জেগে থাকে খনিজ
                              ব্রাত্য প্রক্রিয়ায়৷

উন্মুক্ত— শোভমান, মহাবিস্তৃত
মানুষের শিল্পকলায়
যাত্রাপুরীর প্রাচীর করে সৌধনির্মাণ!
সুসজ্জিত পশুপাখি, খাবারের সমারোহ
বিরাট বিপনী এই— টাকার মণ্ডপ৷

ঘুরে ঘুরে দেখা হলে, ধীরে, মহাদৈত্যরা
চলে যায় তীক্ষ্ণতীর ঘেঁষে৷ তথাপি জেগে থাকে
শুল্ক আদায়ের চোখ, পরখ করে দলবদ্ধ কণা৷

নানারকম ধারণার পাহাড়ে—
না, প্রকৃত টিলায় দাঁড়িয়ে আমরা
দেখি মানুষের বিবরণ৷ মহাপ্লাবনের 
যাত্রীসকল, তুমুল ধুলায়, বিষণ্ন
রঙের ভেতর ম্লান হয়ে যায়৷
হাতে ও মাথায় খাদ্যসম্ভার, আর কিছু গার্হস্থ্য
প্রেমভালোবাসা; যেন কয়েকশত বৎসরের এ যাত্রা৷

ভৌগোলিক সৌন্দর্য কুয়াশায় বিচিত্ররূপ নিলে
প্রাচীরচিত্র থেকে মাত্রাযুক্ত যাত্রাপুর
মগ্ন হতে থাকে আত্মরতিতে, ক্রমে ক্রমে শব্দহীন!

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *