❏ সাম্য রাইয়ান
১
ঘ্রাণ শ্রুতি স্পর্শ সব গেছে
বাড়ির দক্ষিণে সোনালুর গাছ
দিগন্তদুপুরে
স্মৃতি ও পথিক
চলে গেছে অজানা গন্তব্যে।
গাভীর শরীরে ছোপ ছোপ
অন্তহীন অপমান!
দ্বন্দ্বে
কিছু মসৃণতা ছিলো।
অগ্নিরঙিন
সন্ধ্যার মুখে
আমার দিকে তাকিয়ে
হাসছে আমারই শব
অথবা স্বয়ং—
মিশছে মাটিতে
প্রেম-প্রতারণা
তার সাথে আমাদের
সমবেত আর্তনাদ।
২
পাহাড় নিবিয়ে দাও আলো।
বিষম অন্ধকারে
ক্ষতিপূরণের আবেদন
সহজ অভ্যাসে জ্বলে
মুছে যাক।
পিতার পাশে
অনুপ্রাসে
পায়ে হাঁটা পথ
দুরূহ ভীষণ
সহস্র দিকচিহ্নের মুখোমুখি
দিকশূন্য মুসাফির
মায়ের চুড়ি-কণা জাপটে ধরে
অন্তিম দুঃসাহসে।
৩
রাজার ধর্ম খোঁজ। প্রশ্ন করো তাকে—
দুধে-ভাতে স্বপ্ন দেখিয়ে
ভক্তির ছলে ভাঙছে আমাকে।
পেটে ও বাড়িতে
একসাথে
আগুন জ্ব’লে শেষ।
জীবিত ঠিকানাহীন
মৃতের জন্য দেশ!
দূরের হাওয়ায় দেখি শান্তি টলোমলো
নির্বিকার নদী, আমার সাথে চলো।
ভাঙলো প্রাচীন বাড়ি। ভাগ হলো
যৌথপরিবার, স্বজন-বন্ধু-চেনা প্রেত।
আমিও চেয়েছি ভাঙন
আলাদা করতে ক্ষুধার থেকে পেট।
একটাই দিন, একটাই আলো, অগণিত সুর
একটাই রাত, একটাই হাওয়া, প্রকৃতি বিমূঢ়।
৪
রক্তের স্রোতে বৈঠা ছুঁড়ে মারো।
দাঙ্গা ও জবা কী ভাবে ফোটে
কে কাকে ফুটিয়ে তুলতে চায়?
সারাদিনরাত
নিঃসঙ্গ সুবোধ,
হাসিহীন চিৎকার
চোখেমুখে ক্রোধ।
কেন সে হাসে না আজও সরকারি কৌতুকে?
বোধ’য় জানে না আইন; নোটিশ পাঠিয়ে দাও।
আরো যত বুদ্ধি আছে—বরাবর প্রয়োগ করো
তলপেটে লাথি
অথবা কাতুকুতু দিয়ে
বেজার ছেলেকে হাসাতেই হবে।
৫
এই শীত বার্তাবহ—এই মিনার
অস্ফূটে পৃথিবীর নতুন কোলাহল
বাক্য-স্বাধীনতায়
নিদ্রা ভাঙে আদিম পদ্ধতিতে।
মনে মনে আমিও শিশুতর
রাতের মুহূর্তে জ্বালিয়ে দিচ্ছি অন্ধকার।
শাস্তির কথা অন্তহীন ভেবেও জেগেছি
মহানীরবতায়, মুছে দিচ্ছি ঘুম থেকে
রাতের পাহাড়। জীবনের মানে বুঝতে
আমি জন্মাবো কতবার? তোমার কাছে
যেতে কোন উছিলা লাগে না, শবের
মগজে জাগে প্রেম—মূল্যহীন মূল্যমানে।
আমি কি পরিচয়হীন, যখন যুগান্তরেও
‘মাতৃপরিচয়ে স্থির’? এত বধিরতা—বিপুল
আলোতে মুগ্ধতা নেই তার। কিছুই না শোন
যদি, সামান্য তাকাও—যেটুকু অন্ধকার।
৬
এখন কিছুটা রোদ, অপলক শব্দ
খুব সামান্য ঋতু দেখা যায়
আরোগ্যপ্রাপ্ত বীর গুপ্তঘাতকের
দৃষ্টি এড়িয়ে নিক্ষিপ্ত হচ্ছে বনে
দিনেদুপুরেও জ্বলে ওঠে দাঁত
কথা বলে প্রসঙ্গ বদলে দেয়
পাশের বাড়িতে মৃত এক শ্রেণি
অন্য আওয়াজ তুলে
অপ্রসঙ্গের পাশে ডাকছে আমাকে
জানি সে রক্ত থামাতে পারবে না—
তবু মনুষ্যজন্ম স্বীকার করি তার।
গ্রহণ করবো কী করে কুয়াশা-পরিচয়
ক্রমধাবমান শোকে ও বিচ্ছেদে
পরিত্যাক্ত রাত জাগে অবেলায়।
ফিরতে চাই না আমি
ফিরে ফিরে আসে সকালের রোদ।
৭
যাদের দেখি না অনেকদিন—পথচলতি বন্ধু
মুখচেনা লোক, সন্ধ্যাতারাটি; খবর জানি না
তাদের, না দেখে চিন্তা করি। অথচ ছিল না খুব
চেনা-পরিচয়। এই পরিণাম নির্বাক গ্রহণ করেছি।
সব কথা অস্পষ্ট খুব, সাময়িক।
মৃত্যুচিহ্নের মতো চোখের অন্তিম
কালি—ভাসমান মেঘের শামিয়ানা
বাক্ স্মৃতিতে থাকে শুধু চিৎকার
সবার জীবনে বাঘের সাক্ষাৎ ঘটে না।
৮
হৃদয়ের নয় পৃষ্ঠাজুড়ে আমাদের মুক্তির ইশতেহার
ব্রহ্মপুত্র ডাকে মহাজাগতিক সুরে, নৃত্যরত পাহাড়।
কারাগারে বন্দি করবে নদী! আগামী আষাঢ়-শ্রাবণে
বর্ষার গৃহবন্দি দিনে ছিন্ন মাথাগুলো জানাবে অস্তিত্ব।
অলিন্দে অচেনা শাবকের শিসটুকু চিনে রাখি
স্বনিভৃতি ভাঙবে আকাশে—ইতিহাসের পাখি।
দিক-ভুল-করা সন্ধ্যা-শ্রাবক যদি পায় আত্মপরিচয়
বড় রাস্তার অবহেলাপাশে এটুকুই ফুলের গৌরব।
৯
ঘুমিয়ে পড়েছি বিশ্বস্ত মানচিত্রে
ঘাটে এসে ভেড়ে কলম্বাসের নাও
ম্যারিনেট-মাংসের সুবাস, কাঁচা রক্তের।
শীতল। এগুলো হরিণ না কি মানুষের?
বুকের উপরে থরথর ধাতু
একা পেয়ে নিঃস্ব করেছে
গুলিও সমান প্রতিভা
রক্তক্ষতস্রোতে
যে শিশু আতঙ্কে বধির
সে-ই জাতিস্মর—
ভেঙে দেবে মবের প্রাচীর।
১০
উদ্ধত বন্দুক তুমি ধার্মিক নাকি ধর্মহীন?
এত রক্ত গিলেও কেন চেহারা মলিন!
এবার কী নাম দেবে আমার
সংখ্যালঘু, সর্বহারা নাকি নাস্তিক?
তোমার গুলির মাপে কোনটা সঠিক?
যে দিল শাঁখের ধ্বনি অথবা আজান
হত্যা করো না তাকে জ্বলজ্যান্ত প্রাণ।
আমারও ধর্ম ছিলো, হাজার বছর ধরে।
রাজার সেনা, তুমি বুঝবে না
কিছু নেই ক্ষুধার উপরে।