শব্দের ভেতর নিঃশব্দ দেবারতি

❑ সাম্য রাইয়ান 

দেবারতি মিত্র, বাঙলা কবিতার নীরবতম অথচ সবচেয়ে দীপ্ত কণ্ঠগুলোর একটি। যে সময়ে কবিতা ছিল জনতার উত্তেজনা, আন্দোলনের ভাষা, রাজনৈতিক বা নগর-অস্তিত্বের শব্দ, সেই সময়ে দেবারতি নিজের জন্য বেছে নিয়েছিলেন নিঃশব্দতা। তাঁর কবিতায় কেউ হাঁক ছাড়ে না, কেউ পতাকা উড়ায় না, কেউ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সরাসরি স্লোগান তোলে না—কিন্তু প্রতিটি কবিতার ভেতরেই আছে অদৃশ্য প্রতিরোধের ধ্বনি, যা সময়কে অস্বীকারের ভাষায় অনুরণিত হয়। তিনি বলেছিলেন, “কবিতা নিয়ে আমি কিছু করতে পারি না, করতে চাই না, শুধু পৌঁছতে চাই সেই সমুদ্রের কিনারায় যার একদিকে জীবন ও শিল্প অন্য দিকে শূন্যতা যেখানে কল্পনা মুহুর্মুহু অবিরাম নিজেকে সৃষ্টি করে চলে। ঘটনাচক্রে আমার জীবনে কবিতার বিকল্প আর কিছু নেই, ওই একটিমাত্রই আমার পথ ও পাথেয়।” (ভূমিকা, কবিতা সমগ্র)

এই ‘কিছু করতে চাই না’—এই বাক্যটিই তাঁকে আলাদা করে। কারণ বাঙলা কবিতায় অধিকাংশই কিছু করতে চায়—উদ্ধার করতে, পরিবর্তন ঘটাতে, প্রতিরোধ জানাতে। দেবারতির আকাঙ্ক্ষা ছিল বিপরীতমুখী—তিনি কোনো লক্ষ্য স্থির করেননি, তিনি শুধু পৌঁছতে চেয়েছেন। 

তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘অন্ধ স্কুলে ঘণ্টা বাজে’। নামেই নিস্তব্ধতার আওয়াজ আছে। অন্ধদের জন্য বাজে ঘণ্টা—এ কীসের সংকেত? হয়তো আলোহীন জগতে প্রতিধ্বনিই একমাত্র পথপ্রদর্শক। দেবারতির কবিতা সেই প্রতিধ্বনির পথে জন্ম নেয়—শব্দ, যা দেখতে পায় না, কিন্তু অনুভব করে। তাই তাঁর কবিতা পাঠে চোখ নয়, অন্তঃকর্ণ জরুরী হয়ে পড়ে।

দেবারতির জীবনের সবচেয়ে পরিচিত তথ্য—তিনি মণীন্দ্র গুপ্তের সহধর্মিণী। কিন্তু এই পরিচয়টিকে তিনি কখনোই তাঁর সাহিত্যিক পরিচয়ের সঙ্গে মেলাননি। বরং এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, “ওঁর কবিতা, আমার কবিতা—দু’জনেরই ঘর আলাদা, ছাদের নীচে থাকলেও।” এই বিভাজন, এই আত্মপরিচয়ের স্থিরতা—তাঁর কবিতার মধ্যেও গভীরভাবে উপস্থিত। তিনি নিজের স্বরকে মিশতে দেননি কারও সঙ্গে, এমনকি ভালোবাসার মানুষের সঙ্গেও নয়।

তাঁর কবিতায় প্রেম, মৃত্যু, নিঃসঙ্গতা—সবই আছে, কিন্তু কোনওটিরই স্পষ্ট আবেগ নেই। আবেগ যেন ছায়া হয়ে হাঁটে তাঁর কবিতার পাশে, কিন্তু তাকে কখনো ছুঁয়ে ফেলে না। যেমন তিনি লিখেছেন— “সমস্ত জীবন যদি জ্যোৎস্নায় একা থাকা যায় / যেখানে কেবল সুর, কোনও আলো নেই– / সোনার চুলের গোছা যেন খুলে গেল হু হু করে / বিরল জানালা দৃষ্টি ঢেকে অন্ধকার / রাশি রাশি সুরেলা যন্ত্রের সরু তার / তেমন জ্যোৎস্না নয় আমার শরীরে।‌” (তোমার জ্যোৎস্না সুর)

এই “সুর” এবং “আলো”-এর বিরোধেই দেবারতি দাঁড়িয়ে। আলো তাঁর কাছে প্রকাশ, সুর হলো অভ্যন্তর। তিনি প্রকাশের চেয়ে অনুভবকে বেশি মূল্য দিয়েছেন। তাঁর কবিতা অন্ধকারে ফোটা ফুল, যার ঘ্রাণ পাই, কিন্তু রঙ দেখতে পাই না।

দেবারতি মিত্রের কবিতা প্রথাগত নারীবাদের ঘোষণায় বিশ্বাসী নয়। কিন্তু তাঁর প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি দৃষ্টিভঙ্গি গভীরভাবে নারীর অবস্থানকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করে। তাঁর উচ্চারণে কোনো স্লোগান নেই, কিন্তু এক আনকোরা-অনিবার্য সত্য আছে। নারী সেখানে সৃষ্টির সহযাত্রী নয়, সৃষ্টির একমাত্র অবলম্বন। ফলে তা পুরুষতান্ত্রিক বর্ণনার এক গোপন ভাঙন ঘটায়—নরমভাবে, কোমল কণ্ঠে, কিন্তু সম্পূর্ণ অনিবার্যভাবে।

তাঁর কবিতায় একটি বিষয় বারবার ফিরে আসে—একাকিত্ব। প্রেমেও তিনি একা, মৃত্যুতেও একা। তিনি কখনোই ‘দুজন’কে বিশ্বাস করেননি; হয়তো তাঁর কবিতার প্রেমিক-প্রেমিকাও একই শরীরে দুটি সত্তা। ‘রাত্রি জেগেছিলাম’ কবিতায় তিনি লিখেছেন— “ফুলদানি ঐ তোমার শরীর / কাল কে অত ফুল সাজিয়েছিল / আমার বুকে পাপড়ি ঝরেছিল / বুকের মধ্যে পাপড়ি উড়েছিল /…/ ঘুরে ঘুরে পাগল স্রোতের মতন অবিরাম / কালকে তোমার সঙ্গে যখন রাত্রি জেগেছিলাম।”

এই কবিতায় প্রেমের মাধুর্য নেই, আছে ঘূর্ণির তীব্রতা। দেবারতির প্রেম হলো প্রবাহ—নদীর মতো, যা একবার শুরু হলে আর থামে না। এখানে যৌনতা একটি গভীর সত্তার উন্মোচন—কিন্তু তা শরীর নয়, আত্মার। প্রেম এখানে মৃত্যুর সমার্থক—অন্তিমে এক নিঃশেষিত রাত্রি।

তাঁর অনেক কবিতায় প্রকৃতি আসে, কিন্তু তা কোনো অলঙ্কার হিসেবে নয়। বৃষ্টি, ফুল, ছায়া, আলো, নদী—সবই তাঁর কবিতায় আত্মীয় সত্তা। তিনি নিজেকে প্রকৃতির ভেতর বিলিয়ে দিতে চান। ‘বৃষ্টিতে আমি ও তুমি’ কবিতায় লিখেছেন— “গভীর বৃষ্টিপাতের পরে এখন জেগে উঠেছি, / অঝোর পাগল বৃষ্টিপাত, / ছাদ ভাসিয়ে জল জমেছে, / ঝুঁকে আসা কচি ত্রিচূড় শাখার মতো তুমি / আদর নিচ্ছ বৃষ্টিপাতের।”

এই চিত্রটি নিছক বৃষ্টির নয়—এ এক জেগে ওঠা আত্মার দৃশ্য। তাঁর কবিতায় প্রকৃতি মানে আত্মপরিচয়ের রূপান্তর। মানুষ এখানে কোনো কেন্দ্র নয়; বরং মানুষ প্রকৃতির এক ক্ষুদ্র অথচ দীপ্ত অংশ।

দেবারতি মিত্রের কবিতা একরকম “বিচ্ছিন্ন আলো”—এতে কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য নেই, কিন্তু তবু এতে সময়ের বিরুদ্ধে থাকা এক প্রতিস্বর আছে। এক নির্দিষ্ট সময়ের সমাজে, যেখানে কবিতা হয়ে উঠছিল প্রতিবাদের ভাষা, তিনি নিঃশব্দতার পক্ষে দাঁড়ালেন। তাঁর এই অবস্থান অনেকের কাছে এক ধরনের ‘অপসরণ’ মনে হতে পারে; কিন্তু প্রকৃত অর্থে এটি ছিল নিভৃত, সংযমী এক অন্যরকম প্রতিবাদ। হয়ত তিনি ভেবেছেন, ভাষা যত বেশি উচ্চারণে ব্যস্ত হয়, ততই তার আত্মাকে হারায়।

এক সাক্ষাৎকারে তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল—‘আপনি কেন এত কম লেখেন?’ তিনি হেসে বলেছিলেন, “আমি তো লিখি না, কবিতাই আমাকে লিখে নেয়।” এই বাক্যটি শুনলে মনে হয়, দেবারতি কবিতাকে ‘কাজ’ হিসেবে দেখতেন না, দেখতেন এক অন্তঃপ্রবাহ হিসেবে। তিনি লিখতেন তখনই, যখন ভাষা নিজে এসে তাঁর ভেতরে স্থান চাইত। এ কারণেই তাঁর কবিতার সংখ্যা কম, কিন্তু প্রতিটি কবিতা যেন নিজস্ব জীবন্ত সত্তা।

দেবারতির কবিতায় মৃত্যুর কোনো ভয় নেই, কারণ মৃত্যুকেও তিনি শ্বেতপদ্মের মতো পুনর্জন্মের প্রতীক হিসেবে দেখেছেন। তাঁর কবিতার এই অন্তঃপ্রবাহ তাঁকে অন্যান্য সমসাময়িক কবিদের থেকে আলাদা করে। যেখানে অনেকে জীবনের ভাঙনকে কাব্যের উপাদান করেছেন, দেবারতি সেখানে ভাঙনের মধ্যেই এক অনবচ্ছিন্ন শান্তি খুঁজেছেন। বলতে চেয়েছেন—চুপ থেকেও বাঁচা যায়, বিভক্ত পৃথিবীতেও অখণ্ড থাকা যায়, আর অসুখকেও ভালোবাসা যায়। মৃত্যু ছিল তাঁর কাছে স্থিতির নাম। মৃত্যুকে তিনি ব্যক্তিগত করে তোলেননি। মৃত্যু তাঁর কাছে সমগ্র সত্তার এক অনিবার্য গতি। এক সময়ের পরে সবাই জানালা খুলে দেবে, সবাই পর্দা উড়িয়ে দেবে—এটাই জীবন। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁকে নিয়ে লিখেছিল রবিবার পত্রিকা: “তিনি ছিলেন আধুনিকতার অন্তরালে এক পরম নিভৃত কণ্ঠ।” এই বাক্যটিই হয়তো তাঁর সবচেয়ে সত্য বর্ণনা।

দেবারতি মিত্রর কবিতায় আছে নিঃশব্দ-সংলাপ—যেখানে কথা বলে বিরতি, আর উচ্চারণের চেয়ে গভীর হয়ে ওঠে স্থিতি। যেমন তাঁর ‘অসুখ করেনি’ কবিতা শুরু হয়—“আমাদের অসুখ করেইনি, সারবে কী?” এই প্রথম পংক্তিটিই যেন দেবারতির অন্তর্গত দ্বিধার রূপক। অসুখ, যেটি আমরা সারাতে চাই, তিনি সেটিকেই জীবনের অঙ্গ হিসেবে মেনে নিচ্ছেন। অসুখই হয়ে ওঠে তাঁর কবিতার প্রাণরস। তাঁর “সঙ্গী” তখন বলে, “ওই যে কালকে শালিখ পাখিটাকে দেখলে / সুকুমারদের ছাতে স্তব্ধ হয়ে পড়ে আছে, / এখন সে জলাভূমিতে শ্বেতপদ্ম হয়ে ফুটে রয়েছে।” এই চিত্রকল্পে বাস্তবের মৃত্যু আর পুনর্জন্মের অলৌকিকতা এক হয়ে যায়—যেন দেবারতির কবিতা প্রকৃতির পুনর্জাগরণের ভাষা। শালিখ পাখি স্তব্ধ হয়, কিন্তু তারই মৃতদেহ থেকে ফুটে ওঠে শ্বেতপদ্ম। জীবন, মৃত্যু, প্রেম—সবই এক অখণ্ড প্রতিক্রিয়া।
এরপর তিনি বলেন, “দুঃখ-কষ্ট-দারিদ্র-বেদনা-অশান্তি তো / প্রথম থেকে আছে, থাকবেই।” এই পংক্তি কোনো আক্ষেপ নয়, বরং এক চূড়ান্ত মেনে নেওয়া। দেবারতির কবিতার শক্তি এখানেই—তিনি দুঃখকে প্রতিরোধ করেন না, বরং তার সহাবস্থানে এক ধরণের শান্তি খুঁজে নেন। “তবুও তুমি আমি কিন্তু দুজনে চিরদিন / একসঙ্গে আছি, একসঙ্গে থাকব”—এই ঘোষণা শুধুমাত্র প্রেমের নয়, অস্তিত্বের। আমাদের অদৃষ্ট কেউ খণ্ডাতে পারেনি, পারবেও না—এই বিশ্বাস নিঃশব্দ প্রতিবাদের মতো। অসুখ সারবে না, কিন্তু সেটাই ভালো। দেবারতি বুঝেছেন, অসুখই জীবন, সারিয়ে তোলার চেষ্টা এক প্রকার মৃত্যুই। তাই তাঁর ভাষা নিভৃত অথচ দীপ্ত।

‘সবই অখণ্ড’ কবিতায় তিনি বলেন, “টুকরো টুকরো করে কিছু দেখো না, / সবই অখণ্ড।” এই ‘অখণ্ডতা’ই বোধ করি তাঁর কবিতার মূল তত্ত্ব। আধুনিক মানুষের দৃষ্টি যত খণ্ডিত, দেবারতির দৃষ্টি তত পূর্ণ। পৃথিবীকে আমরা যেভাবে ভাগ করি—রাজনীতি, প্রেম, দেশ, দেহ—সবখানেই তিনি সেই ভাগের বিরুদ্ধে দাঁড়ান। “ভাগ-বিয়োগে কী লাভ? যোগ আর গুণ অঙ্কেরই বা কী দরকার?”—এই পংক্তিগুলো আধুনিক জীবনের গাণিতিক বিচ্ছিন্নতার বিরুদ্ধে এক অন্তর্মুখী ঘোষণা। তিনি সম্পর্কের গাণিতিক পরিমাপ মানতে চান না, সুখ-দুঃখ, সফলতা-ব্যর্থতার অঙ্কে নিজেকে বাঁধতে চান না। তাঁর কবিতায় অঙ্কের পরিবর্তে কাজ করে অনুভবের নন্দনশাস্ত্র।

তাঁর কবিতার একান্ত আশ্রয় সেই অনুভবেই—“এইভাবে এসো, স্বপ্নকেও মুছে ফেলে / আমরা দুজনে মিলে একা একা থাকি। / অস্তিত্বে জাগরণ ও তন্দ্রা অহরহ / অনুভব করি। / কেউ আমাদের বোঝে না, বুঝবেও না।” (দুজনে মিলে একা একা) এই অংশে তাঁর চিরচেনা আত্মনিবিড় সুর আরও গাঢ় হয়ে ওঠে। স্বপ্নকেও মুছে ফেলা মানে কল্পনার পরিসর ছাড়িয়ে এক সত্যের দিকে এগোনো, যেখানে একাকিত্বই পরম সম্পর্ক। “আমরা দুজনে মিলে একা একা থাকি”—এই চূড়ান্ত বৈপরীত্যই দেবারতির ভাবগাম্ভীর্য। একা থেকেও যুগল, যুগলেও নিঃসঙ্গ। বোঝার আকাঙ্ক্ষা নেই, বোঝা যাবে না বলেই মুক্তি। এই মুক্তিই তাঁর কবিতার আত্মা।

তাঁর কবিতাসমগ্র পড়তে পড়তে মনে হয়, দেবারতি যেন এক আধুনিক উপনিষদ লিখেছেন—যেখানে প্রেমের মধ্যে রয়েছে আধ্যাত্মিকতার স্নিগ্ধতা, নিঃসঙ্গতার মধ্যে রয়েছে সম্পূর্ণতার বিশ্বাস। তাঁর ভাষা স্নিগ্ধ, কিন্তু তা কখনোই কোমলতাবিলাসী নয়। বরং, সেখানে থাকে কঠোর প্রশান্তি—যেমন বৃষ্টির পরে মাটি গরম থাকে, কিন্তু পৃষ্ঠে নেমে আসে শীতলতা। দেবারতির কবিতা সেই রকমই: নীরব কিন্তু অগ্নিময়।

এই নিস্তব্ধতার উৎস খুঁজলে আমরা তাঁর সাক্ষাৎকারগুলিতে এর প্রতিধ্বনি পাই। একবার তিনি বলেছিলেন—“আমার কবিতা আমি কারও দিকে তাকিয়ে লিখি না। আমি শুধু ভিতরটা শুনি।” (সাক্ষাৎকার: আনন্দবাজার পত্রিকা, “দেবারতি মিত্র: আমি ভিতরটা শুনি”, ২০১৪) এই “ভিতরটা শুনি” কথাটাই আসলে তাঁর কাব্যদর্শন। তাঁর কবিতায় কোনো বাহ্যিক অলঙ্কার নেই, কোনো নাটকীয়তা নেই। বরং, অভ্যন্তরীণ সুরের ধীরতা, আত্মবিশ্বাস, এবং এক প্রকার অনাসক্তি আছে। আধুনিক বাঙলা কবিতায় যেখানে অনেকেই ছন্দের ভাঙনে আত্মপরিচয় খুঁজেছেন, দেবারতি সেখানে নীরবতার ভেতর দিয়ে পরিচয় গড়েছেন।

দেবারতির কবিতায় প্রেম কেবল রোমান্টিক সংলগ্নতা নয়; অস্তিত্বের সহযাত্রা। তাঁর পংক্তি—“আমাদের অদৃষ্ট কেউ খণ্ডাতে পারেনি, কেউ পারবেও না”—এই অদৃষ্টের মধ্যেই তিনি মানবজীবনের পরম আশ্রয় দেখেছেন। সম্পর্ক এখানে দেহগত নয়, এটি এক আত্মিক বন্ধন। “অসুখ করেইনি তো সারবে কী”—এই পংক্তি যতটা বিষাদময় শোনায়, ততটাই তা এক অন্তরঙ্গ স্বীকারোক্তি। জীবনকে তিনি চিকিৎসার বিষয় মনে করেননি, বরং তার রোগকেই জীবনের আরেক রূপ ভেবেছেন। এই অসুখই তাঁকে অনুভব করিয়েছে জীবনের সঞ্চার, ভালোবাসার স্থায়িত্ব।

দেবারতি মিত্র বাঙলা কবিতাকে রাজনীতির বাইরে এনে পুনরায় অন্তর্লোকের পথে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁর কাব্যস্বর কোনো ঘোষণায় বিশ্বাসী নয়, কোনো রণভূমিতে অবস্থান নেয় না। তিনি দেখিয়েছেন, কবিতা আসলে উচ্চারণ নয়, শ্বাস। শব্দ নয়, বিরতি।

আজকের কোলাহলময় সাহিত্যজগতে দেবারতির কবিতা প্রতিচিহ্ন বিশেষ। তিনি লিখেন— “সব শব্দ শেষ হলো / ঘণ্টা বাজে দূরে৷” সেই শব্দ আজও থেকে গেছে—নির্জন, কিন্তু দীপ্ত ভাবে।

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *