আলো-অন্ধকারের মাঝখানে একজন জহির রায়হান

❑ সাম্য রাইয়ান

আলো-অন্ধকারের মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা চলচ্চিত্রকার জহির রায়হানের ভেতরে গভীর ব্যাকুলতা ছিলো দেশকে বুঝতে চাওয়ার, নিজের সময়কে ধারণ করার, ফলে তার হাতেই সিনেমা হয়ে উঠেছে জাতির আত্মাকে প্রশ্ন করার ভিজ্যুয়াল ভাষা।

স্টপ জেনোসাইড দেখে এখনও আমার মনে হয়, তিনি শুধু পাকিস্তানি সেনাদের হত্যাযজ্ঞই নথিভুক্ত করেননি, বরং ইতিহাসের পিঠে রক্তাক্ত এক আর্তনাদ খোদাই করে গেছেন।

তাঁর সাহিত্যও একইরকম জরুরি। যেমন হাজার বছর ধরে উপন্যাসে তিনি দেখিয়েছেন, কেমন করে একটি পরিবারের ইতিহাস পুরো বাঙালি জাতির ইতিহাস হয়ে উঠতে পারে! প্রেম, বেদনা, সামাজিক ভাঙন—সব একসাথে মিলেমিশে গেছে।

জহির রায়হানের কলমে ব্যক্তিগত কাহিনি কখনোই স্রেফ ব্যক্তিগত থাকে না, তা হয়ে ওঠে জাতির সমষ্টিগত স্মৃতি। তিনি বেঁচে থাকলে হয়তো আমাদের সিনেমা ও সাহিত্য আরেক দিগন্ত ছুঁতে পারত।

কিন্তু যে জীবন তিনি বেছে নিয়েছিলেন, তা ছিল বিপজ্জনক। স্বাধীন বাঙলাদেশে ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি জহির রায়হান, তাঁর ভাই শহীদুল্লাহ কায়সারকে খুঁজতে গিয়ে হারিয়ে গেলেন। এই ভূখণ্ডে সাহসী কণ্ঠস্বরের পরিণতি কতটা ভয়াবহ হতে পারে, এই হারিয়ে যাবার ঘটনা তারই প্রতীক। তবু আমি মনে করি, তাঁর না-ফেরা আমাদের একইসাথে ক্ষতি ও দায়। কারণ তিনি যেই স্বপ্নের আকার এঁকেছিলেন চলচ্চিত্রে ও সাহিত্যে, সেটিকে পূর্ণ করে তোলা এখনো আমাদের দায়িত্ব।

বাঙলাদেশের ইতিহাস যদি শুধু রাজনৈতিক দলিল দিয়ে লেখা হয়, তবে তা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে—তাকে পূর্ণতা দিতে প্রয়োজন হবে জহির রায়হানের ছবি আর লেখা। যতদিন না বাঙলাদেশ তার স্বপ্নের সমান হবে, ততদিন জহির রায়হান আমাদের কাছে এক অসমাপ্ত প্রতিশ্রুতি হয়ে থেকে যাবেন।

~

দিনহীনের দিনলিপি : ১৯ আগস্ট

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *