বোর্হেস: অদৃশ্য দরজার ভেতর দিয়ে

❑ সাম্য রাইয়ান

রাত নামছে। জানলার বাইরে শহুরে ঝাপসা আলো। মনে হচ্ছে, বোর্হেসের সেই অসীম গ্রন্থাগারের ভেতরে আটকে গেছি। যত পড়ি, তত নতুন তাক, নতুন বই, নতুন করিডোর খুলে যাচ্ছে।

সাহিত্য মানেই বাস্তবের প্রতিফলন নয়, কখনো কখনো তা এক অদৃশ্য দরজা, যেটা খুলে দিলে অন্য জগতের আলো এসে পড়ে। বোর্হেসের ক্ষেত্রে দেখি, তিনি দস্তয়েভস্কি বা কাফকার মতো মানবজীবনের দুঃখ কিংবা অপরাধের ইতিহাস লেখেননি; বরং মানুষের বাইরেও কিছু ধরার চেষ্টা করেছেন। তাঁর প্রতিটি গল্প একটা কবিতার মতো, অর্ধেক বলা, অর্ধেক পাঠকের মনের ভেতর গড়ে ওঠা। তাঁর অন্ধত্বও যেন প্রতীক—দৃষ্টি হারিয়েও তিনি অদৃশ্য পৃথিবীকে সবচেয়ে স্পষ্টভাবে দেখতে পেরেছিলেন।

বোর্হেসকে আমার এমন এক পাঠক মনে হয়, যিনি পড়ার ভেতর দিয়ে লিখেছেন, আর সেই লেখাগুলো আমাদের হাতে পৌঁছেছে কোনো রহস্যময় পথ ধরে। “আলেফ”, “দ্য লাইব্রেরি অব ব্যাবেল”, কিংবা “ফিকসিওনেস”—প্রতিবার পড়তে গিয়ে আমি পৃথিবীর নতুন নতুন রূপের সাথে পরিচিত হয়েছি। বইয়ের তাক, আয়না, গোলকধাঁধা, সময়—এগুলো তাঁর লেখায় এমনভাবে চরিত্র হয়ে ওঠে, আমি আর নিশ্চিত থাকতে পারি না জিনিসগুলো সত্যিই বাহ্যিক, নাকি কেবল ভাষার ভেতরকার প্রতিচ্ছবি। ফলে পৃথিবীর ভেতরে আরেকটা পৃথিবী আবিষ্কারের অনুভূতি হয়। এমন নয় যে এই পৃথিবীটা দৃশ্যমান—বরং সেটা এক ধরনের অদৃশ্য আলোকরেখা, যেটা চোখে ধরা পড়ে না কিন্তু মনের গভীরে অস্বস্তির মতো টের পাওয়া যায়। 

প্রথমবার “দ্য আলেফ” পড়ার পর মনে হয়েছিল, এ কি সত্যিই সম্ভব? সবকিছুর সমগ্রতা এক বিন্দুতে দেখা? কিন্তু তখনই বুঝলাম, বোর্হেস আসলে আমাকে একদম বাস্তব কিছু দেখাচ্ছেন না, তিনি আমার বিশ্বাসকে পরীক্ষা করছেন। আমি জানি না আলেফ আসলেই আছে কিনা, কিন্তু গল্পটা পড়তে পড়তে আমি বিশ্বাস করেছি যে আছে। আর এ বিশ্বাসের খেলা বোর্হেসের কাছেই শেখা। তাঁর নির্মিত মানচিত্রে আমরা ঢুকে পড়ি, ঘুরি, পথ হারাই, আবার হঠাৎ করে কোনো অদৃশ্য দরজা পেয়ে যাই!
যেন এইভাবে পথ চলাতেই আনন্দ!

দিনহীনের দিনলিপি : ২৪ আগস্ট 

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *