❑ সাম্য রাইয়ান
একজন পুঁজিপতি পরিবারের সন্তান, যার শৈশব কেটেছে কাপড়ের কারখানার হিসাব-নিকাশের ভেতর, শিখেছিলেন কীভাবে মুনাফা বাড়াতে হয়। অথচ সেই মানুষটিই নিজের আরাম-আয়েশকে ছুঁড়ে ফেলে শ্রমিকদের দুঃখ-দুর্দশার ভেতর ঢুকে পড়লেন। এমনকি শুধু ঢুকেই পড়লেন না, সেই বাস্তবতা বুকে নিয়ে নিজের গোটা চিন্তার জগৎটাকেই উল্টে দিলেন।
তিনি ফ্রেডরিখ এঙ্গেলস৷ আজ, ৫ আগস্ট—তাঁর মৃত্যুদিন৷ ১৮৪২ সালে ম্যানচেস্টারে পারিবারিক কারখানায় কাজ করতে গিয়ে যিনি দেখেছিলেন কীভাবে মানুষকে যন্ত্রে পরিণত করা হয়, কীভাবে কাজ মানে হয়ে দাঁড়ায় অবসানহীন নিপীড়ন। সেই অভিজ্ঞতা তাঁর শ্রেণী-চেতনায় ভূমিকম্পের মতো ধাক্কা দিয়েছিল। আমরা প্রায়ই বলি, ‘চেতনার পরিবর্তন’। কিন্তু এঙ্গেলসের ক্ষেত্রে সেটা নিছক মনস্তাত্ত্বিক নয়, বস্তুগতও। তিনি নিজের সম্পদের বড় একটা অংশ দিয়ে কার্ল মার্ক্সকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন—নির্বিচারে, নিরলসভাবে—যাতে মার্ক্স লিখতে পারেন।
ভাবি, এই আত্মত্যাগকে কী নামে ডাকবো? বিপ্লবী দায়িত্ব? না, সেটা কম শোনায়। হয়তো একে বলা যায়—অন্তর্জগতের বিপ্লব।
একজন মানুষ যখন নিজের শ্রেণিস্বার্থ, সামাজিক অবস্থান, সুবিধা—সবকিছু ছেড়ে দিয়ে নিপীড়িত শ্রেণির পক্ষে দাঁড়ায়, সেটা কেবল রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নয়, এক ধরনের আত্মবিসর্জনও। আজকের দিনে এসে এমনটা কল্পনাও করা যায় না—একজন পুঁজিপতির সন্তান যিনি সত্যিই পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন, কেবল লেখায় নয়, নিজের জীবনে। আজকের বাস্তবতায় যখন সংবাদপত্র খুললেই দেখি, গত এক বছরে রিজিম চেইঞ্জের ফল হিসেবে অনেকে শূণ্য পকেট থেকে বাড়ি, গাড়ি, টাকা করেছে—সেখানে এঙ্গেলসের মতো মানুষ কোথায় পাবো?
তাঁর লেখা “পরিবার, ব্যক্তিগত মালিকানা ও রাষ্ট্রের উৎপত্তি” বইটি আমার চিন্তাজগৎ গভীরভাবে নাড়িয়ে দিয়েছিলো।
জেনেছি—পরিবারের অজানা পরিসর ও রাষ্ট্রধারণা; শ্রেণি, কর্তৃত্ব, মালিকানা আর শোষণপ্রবাহ।
যে ভাষায় আমি ভালোবাসা বুঝতাম, সেই ভাষা নিয়েও সন্দেহ তৈরি করে এ বই।
এঙ্গেলসের বিশ্লেষণ আমার চোখ খুলে দিয়েছিল—রাষ্ট্র নয়, পরিবারই প্রথম কর্তৃত্ব কাঠামো।
আমি পাল্টে গিয়েছিলাম; নিঃশব্দে, গভীরভাবে।
৫ই আগস্ট ২০১৩