ব্যক্তিগত থেকে সামগ্রিক অন্তর্দহনে পরিণত হয় যে কবির কবিতা

❑ ড. মধুমঙ্গল ভট্টাচার্য 

“মাত্র আটাশ বছর গেল, অথচ
ঘুরে ঘুরে মনে হয় কয়েক শতাব্দী আগে
হারিয়ে গিয়েছিলাম ধূ ধূ রাস্তার পরে।
রাত-দিন একাকার, শহর-গঞ্জ-গ্রাম
দেখেছি সকল— পরিমিত পদক্ষেপে।

অবশেষে
নিক্ষেপিত আমি নষ্ট রেস্তোরাঁয়।”
(আটাশ বছর পর/ সাম্য রাইয়ান)

আটাশ বছর বয়সে কবি সাম্য রাইয়ান নিজেকে নষ্ট রেস্তোরাঁয় আবিষ্কার করেছেন৷ এই কবিতাটি পড়ার পর একটা অস্বস্তিকর অনুভূতি হচ্ছিল৷ আমি ভাবছিলাম— একজন মানুষ যদি জীবনের আটাশ বছর অতিবাহিত হবার পর নিজেকে নষ্ট রেস্তোরাঁয় আবিষ্কার করেন তাহলে তার অনুভূতি কেমন হতে পারে৷ ‘আত্মকথা’ প্রসঙ্গে কবি অরুণেশ ঘোষ একবার বলেছিলেন “১১ বছর বয়সেই বুঝে গিয়েছিলাম জীবন নিরর্থক। বেঁচে থাকা উদ্ভট। জন্ম অকারণ ও আকস্মিক। ছক আগে থেকেই করা আছে, জন্ম মাত্রই দুটো শ্রেণীর যেকোনো একটাতে অন্তর্ভুক্ত হতে হবে। হয় দাস না হয় প্রভু। হয় অত্যাচারিত না হয় অত্যাচারী। শোষক নয়তো শোষিত। মানব সভ্যতা এর বাইরে কিছু জানে নি।” কোথায় যেন সাজুয্য খুঁজে পাচ্ছি দুই দেশের এই দুই কবির অনুভূতির মধ্যে৷ যদিও পুরোপুরি মেলানো যাচ্ছে না, কিন্তু আমার কেন যেন মনে হচ্ছে অরুনেশ ঘোষ আত্মকথায় যা বলেছেন, সাম্য এত বছর পর পরিমিত ভঙ্গিতে তার নতুন উপলব্ধি প্রকাশ করতে একই রকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন৷

দ্বিতীয় দশকে আত্মপ্রকাশকারী কবি সাম্য রাইয়ান অতি অল্প সময়ের মধ্যে বাংলা কবিতায় নিজস্ব ভাবনার বীজ বপন করতে সফল হয়েছেন।

আজকের এই অস্থির সময়ে দালালি আর দলাদলি করে সহজেই সাফল্য লাভের বিষয়টি মানুষ আত্মস্থ করে নিয়েছে। কিন্তু সাহিত্যক্ষেত্রে এই পদ্ধতি অবলম্বন করে যথার্থ কবি হয়ে ওঠা কোনকালেই সম্ভব নয়। সেজন্য নিজস্ব এলেম থাকা দরকার। সাম্য সেই অগ্নি পরীক্ষায় কর্ণের মতো লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন৷

বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের প্রান্তজেলা কুড়িগ্রামে বসেই মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে সাম্যের গ্রন্থ সংখ্যা দশ। পর্যায়ক্রমে তাঁর রচনাগুলি হল:
       কাব্যগ্রন্থ—
      • বিগত রাইফেলের প্রতি সমবেদনা (২০১৬)
      • হলুদ পাহাড় (২০১৯)
      • মার্কস যদি জানতেন (২০১৮)
      • চোখের ভেতরে হামিংবার্ড (২০২২)
      • লিখিত রাত্রি (২০২২)
      • হালকা রোদের দুপুর (২০২৩)

      গদ্যগ্রন্থ—
     • সুবিমল মিশ্র প্রসঙ্গে কতিপয় নোট (২০১৫)
     • লোকাল ট্রেনের জার্নাল (২০২১)

      সম্পাদিত গ্রন্থ—
     • উৎপলকুমার বসু (২০২২)
     • জন্মশতবর্ষে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ (২০২৩)

কেবলমাত্র সংখ্যার নিরীখে নয়, বিষয়ভাবনা এবং আঙ্গিকের দিক থেকেও সাম্য রাইয়ান ক্রমশই নিজের স্বকীয় শিল্প প্রতিভা মেলে ধরেছেন অনায়াসে।

সাম্যের প্রথম কবিতাপুস্তিকা পরিচায়িকা অংশে যথার্থই লেখা হয়েছিল, 
“ঘটনার বয়ানসূত্র থেকে আলো ছড়ানো একটা কথামুখ দেখতে পাচ্ছি। নদীফলে ভেসে যাচ্ছে তীর, ঘনবুনটের জাল ভরে উঠছে ব্যর্থমাছে। গানবাহী শামুকপুত্র চিনে নেবে মহাকাল, পৃথিবীর ছায়া। নিবিড় দৃশ্যের মিউজিয়ামে দাঁড়িয়ে তবু একজন কবি, একা; তোমাপৃষ্ঠের নিচে প্রাণপ্রবাহের উপর একই সমতলে ভাসমান অবস্থায় রয়েছে। গ্যালনসম বিষাদ শুধু বেরিয়ে আসে কলমের ডগা দিয়ে। একবার বিষাদ লিখে আমি কলমের নিব ভেঙে ফেলি। পূর্বনির্মিত পশমী জঙ্গল থেকে কাগুজে শরীরে শাদায় লেপ্টে যায় দীর্ঘ হতাশার মতো ম্লাণ উপাখ্যান। কী করে নির্মিত হয় কবিতাগাছের ফল; মানুষের কাছে আজ অব্দি সেসব অমীমাংসিত বিষ্ময়!”

সাম্য রাইয়ানের কবিতার বিষয় ও আঙ্গিক বৈচিত্র্য এবং কাব্যকুশলতা সত্যিই বিষ্ময় জাগানিয়া৷ প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘বিগত রাইফেলের প্রতি সমবেদনা’ থেকেই তিনি পরিণত কবি-মনস্কতার পরিচয় দিয়েছেন। কবি লিখেছেন,
“বিগত সময়ের কর্মকে কেটেকুটে, ব্যাপক
কাটাকাটি হলেও নতুনে রয়েছে ছাপ, পুরানের

চিহ্নিত হচ্ছে ধীরে, না-লেখা কলম, তেলের কাগজ
তা-হোক, তবু আবিস্কৃত হোক প্রকৃত যাপন...

আদিম শ্রমিক আমি; মেশিন চালাই।
মেশিনে লুকানো আছে পুঁজির জিন
চালাতে চালাতে দেখি আমিই মেশিন”
(মেশিন)

কিংবা

“এইখানে আমি একা, নিঃসঙ্গ পরিব্রাজক।
তারপরও সে আছে এখানেই
মাড়াইকৃত চালের মতো শুভ্র শরীর নিয়ে
এখানেই কোথাও সে রয়ে গেছে
অপ্রকাশিত প্রজাপতি হয়ে।

শাদা প্রজাপতি এক জীবন্ত এরোপ্লেন।
হাত বাড়ালেই তার উন্মাতাল গান
উঠে আসে হাতে কান্নার সুর।”
(শাদা প্রজাপতি)

অথবা ‘নৈশসঙ্গী’ কবিতার অংশবিশেষ উল্লেখ করা যায়, যেখানে কবি লিখেছেন,
“এই রাস্তা চলে গেছে
অধিকতর নিঃসঙ্গতার দিকে৷
পুরনো শহরে বয়সী শামুক, হেঁটে যায়
অক্ষয়দাস লেন পেরিয়ে—

পকেটে মুদ্রা নাচে৷
গলির মুখে নাচে পুলিশের গাড়ি৷

বেদনাহত কোকের বোতল ছুঁয়ে
নৈশ বন্ধুর সাথে ট্রাফিক পেরিয়ে হাঁটি৷
অদেখা প্রতিবেশিনীর নিঃশ্বাস কাঁধে
টের পাই, আমরা তখন মেঘের ছায়ায়
অন্ধকার, বৃষ্টিহীন গ্র্যাণ্ড এরিয়ায়!”

এভাবেই ব্যক্তিগত পরিসর থেকে রাষ্ট্রব্যাপী অদ্ভুত অন্ধকারের নগ্নচিত্র অনায়াসেই ফুটে ওঠে সাম্যের কবিতায়। তিনি তাঁর ‘শাদা প্রজাপতি’র মতো চোখে চারপাশের চেনা জগৎটাকে এমনভাবে অবলোকন করেন যা মননশীল পাঠককে তাঁর কবিতার মাধ্যমে অনির্বাণ কল্প-বাস্তবতার মুখোমুখি এনে দাঁড় করিয়ে দেয়। রাষ্ট্র-পুলিস এবং আগ্রাসনকে কত সহজ-সাবলীলভাবে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আগ্রাসনের বিপরীতে শিরদাঁড়া টানটান করে কবি এক বাক্যে সকল সাম্রাজ্য-অহং চুরমার করে দিলেন! সব থেকে আশ্চর্যের বিষয়, কবিতায় সাম্য রাইয়ানকে একরৈখিক আঙ্গিকে চিহ্নিত করা যায় না৷ কবিতায় তিনি বহুরৈখিক, একেকটি কবিতার বইয়ে তাঁকে আমরা নতুন রূপ-বর্ণে আবিষ্কার করি৷ এটি আসলে কবির নিজেকে আবিষ্কারেরই প্রক্রিয়া৷ সাম্যের কবিতার বইগুলো পড়তে পড়তে আমরা ক্রমাগত যেন নতুন ধরণের আবিষ্কার প্রক্রিয়ার সাথেই পরিচিত হতে থাকি৷ ‘চোখের ভেতরে হামিংবার্ড’ বইয়ে আমরা যে ফর্মের কবিতার সাথে পরিচিত হই— তা অত্যন্ত লিরিকাল, উপচে পড়া প্রেম—৷ ৬৪ পৃষ্ঠার এ বইয়ে কবিতা আছে ৪৮টি৷ সাম্যের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, গভীর দার্শনিক অভিব্যক্তি তিনি অতি সাবলীল ভঙ্গিমায় প্রকাশ করতে পারেন৷ মনে পড়ে রবীন্দ্রনাথের কথাখানি— ‘সহজ কথা কইতে আমায় কহ যে / সহজ কথা যায় না বলা সহজে৷’ সহজ কথা সহজে বলারই শুধু নয়, বরং জটিল-গভীর কথাও সহজে বলার অনায়াস ভঙ্গিমা সাম্য রপ্ত করেছেন৷ যা আমাদের বিস্মিত করে৷ উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করা যেতে পারে ‘জীবনপুরাণ’ কবিতার পংক্তি— “বানান ভুল হলে কাছের মানুষও কাচের হয়ে যায়!” এ যেন আমার-আমাদের মনের কথা৷ কত সহজ, সাবলীল; অথচ এর গহীনে লুকায়িত গভীর দর্শন৷ যার উপলব্দিক্ষমতা যত শক্তিশালী, সে পাঠক সাম্যের কবিতা তত নিবিড়ভাবে উপলব্ধি করতে পারবেন৷ এপ্রসঙ্গে সাম্য নিজেই লিখেছেন ‘জীবনপুরাণ’ কবিতায়— “গভীর, সহজ সুরে দর্শন জাগে / অনুরাগে৷”

‘শিকার’ কবিতায় কবি লিখেছেন—
“প্রার্থনায় শিকার করো প্রিয়তম হরিণীকে;
তার ভেতরে বইছে অনন্ত ঝরণাধারা!”
মাত্র দুই পংক্তি! মাত্র দুইটি! অথচ কী গভীর বক্তব্য৷ প্রিয়তম হরিণীকে শিকার করতে বলছেন কবি৷ অথচ হিংস্রভাবে নয়, প্রার্থনার মতো করে৷ শিকারের যে রূপের সাথে আমরা পরিচিত ছিলাম, এই কবিতা পাঠের পর সেই রূপ আমাদের সামনে ভেঙেচুড়ে যায়৷ যাকে শিকার করার কথা বলছেন, তাকেই তিনি প্রিয়তম বলে সম্বোধন করছেন৷ অর্থাৎ এই শিকার অন্যরকম শিকার৷ এখানে শিকারের হিংস্রতা নেই৷ জখম নেই৷ আসলে আছে প্রেম৷ প্রেম দিয়ে তিনি শিকার করতে চাইছেন, আসলে কবি এখানে ‘শিকার’ শব্দটি নিজের করে নেয়া বা আপন করে নেয়া অর্থে ব্যবহার করেছেন৷ কবি হিসেবে তিনি যথার্থ কাজই করেছেন৷ আগ্রাসন দিয়ে নয়, বরং প্রেম দিয়ে কবি দুনিয়া জয় করার মনোভাব পোষণ করেন৷ এটাই বাংলার আদি দর্শন৷ যা সাম্যের দর্শনের বিশেষ শক্তি৷ তিনি এ বাংলার মাটিবর্তী কবি৷ তাই তিনি ‘গভীর স্বপ্নের ভেতর’ কবিতায় লিখেন— “ফড়িং নয়, ধরতে চেয়েছি ফড়িংয়ের প্রেম৷” ফড়িং প্রতীক ব্যবহার করে কবি এখানে বস্তুকে নিজ কড়ায়ত্ত করার পরিবর্তে ভাবকে আলিঙ্গনের অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন৷ এ বইয়ের প্রায় প্রতিটি কবিতায়ই প্রেমের জয়গান গেয়েছেন কবি, জীবনের জয়গান গেয়েছেন৷ এই প্রেম শুধুই মানব-মানবীর নয়৷ অনেকটা সহজিয়া দর্শনের প্রেম৷ প্রাণ-প্রকৃতি-প্রতিবেশের প্রতি প্রেম এ বইয়ের প্রধান বিষয়৷ ‘নির্বাসনের বনে’ কবিতায় কবির বৃক্ষপ্রেম আমাদের আশ্চর্য করে৷ কত সাবলীলভাবে তিনি বৃক্ষকে মানুষেরই সমান মর্যাদায় ভালোবাসা দিয়েছেন তা টানাগদ্যে রচিত কবিতাটি পাঠ করলে বোধগম্য হয়—
“গাছটা অসুস্থ; ওকে ডাক্তার দেখাবো। হাতে অনেক কাজ এখন। তোমার কাছে ফিরে নদীমাতৃক হবো। সুবাসিত পাতাবাহারের কাছে কয়েকটা আকাশ জমা আছে; রাত গভীর হলে সেই গল্পটা শুনতে হবে আবার। কেন যে আসে উদগ্র শুক্রবার; সমস্ত প্ল্যান ভেস্তে যায় আমার; কোনোকিছু ঠিক থাকে না! পঠিত গানের নাম ধরে ডাকি তবু কোথা থেকে উঠে আসে সব ব্যর্থ কবিতামালা।

যে অসহ্য ওষুধবিক্রেতা জানে না মেঘেদের প্রকৃত বানান, তাকেও তুমুল বৃষ্টি মাথায় নিয়ে বাড়ি যেতে হবে। এদিকে আমি একটা খসে পড়া নক্ষত্র পকেটে জমা রেখেছি; বৃষ্টি ভীষণ চিন্তায় ফেলে দিলো!”

এর পরের কাব্যগ্রন্থ ‘লিখিত রাত্রি’র কবিতাগুলো আঙ্গিক ও বিষয়বৈচিত্রে ‘চোখের ভেতরে হামিংবার্ড’ বই থেকে একদমই ব্যতিক্রম৷ আলাদা শিরোনামহীন, সংখ্যা চিহ্নিত ৫৫টি কবিতা নিয়ে এ বই কবির বিশেষ শক্তিমত্তার পরিচয় বহন করে৷ এ বইয়ের প্রতিটি কবিতা পাঁচ পংক্তি বিশিষ্ট এবং প্রতি পংক্তি ১৮ থেকে ২০ বর্ণ বিশিষ্ট৷ এ যেন আরেক নতুন কাব্যধারা, যা সাম্যের নিজস্ব ভঙ্গিমা৷ পুরো বইতে সাম্য আশ্চর্যভাবে স্ব-মেজাজ ধরে রেখেছেন৷ একই সুর-ভঙ্গিমায় পুরো বই তিনি সমাপ্ত করেছেন৷ এ সত্যিই রাত্রির গল্প৷ অনেক রাত নাকি একটিই রাত অনেক চোখে? বইটি পড়তে পড়তে এ প্রশ্নই আমার মাথায় বারবার ঘুরপাক খাচ্ছিলো৷ সবগুলো কবিতায় রাতের বিবরণ দিয়েছেন কবি৷ আসলে তিনি রাতই লিখেছেন৷ নামকরণ শতভাগ সার্থক৷ বইটির ফ্ল্যাপ উদ্ধৃত করি— “পঞ্চান্ন পর্বের এই সিরিজজুড়ে রাত্রির গল্প— অনেক রাত— রাতের পর রাত যা লিখিত হয়েছে— এক রাত্রিতে এসে তা পূর্ণরূপ নিয়েছে৷ সেখানে বিস্তৃত হয়েছে রাত্রির নিজস্ব আসবাব— কুকুর, পতিতা, নাইটগার্ড, পাখি, কবি, প্রেম, বিবাহ, ট্রাক ড্রাইভার…!” কবি সাম্য রাইয়ানের হাতে যে রাত লিখিত হয়েছে, কেমন তার রূপ? মলিন, মোলায়েম, কোমল? নাকি রুক্ষ, কঠোর, কঠিন? এর উত্তর খুঁজতে আমরা পাঠ করবো তাঁর কবিতা— 
“যেতে যেতে পথে, মধ্যরাতে; কুকুর, পুলিশ ও
বেশ্যাকে নিঃশব্দে বলি: পথ আটকানো নিষেধ। এ
রাত শুধুই প্রেমিক, কবি ও পাগলের। গান শেষে
দ্যাখো পুরোটা জুড়ে শুধু ছেড়া পাতাফুল পড়ে
ছিলো যা, সকল খারিজ হলো অন্ধবাগান থেকে৷”
(ঊনপঞ্চাশ)
উন্নত মন্দিরের কাছে প্রার্থনা করেছি—এ রাত
পূর্ণদৈর্ঘ্য হোক; নীলাভ ভায়োলিন স্থায়ী হোক
আদরের করোটিতে। মৃত শরীরের স্মৃতিবাহী
সকল জাহাজ জেগে উঠুক মানুষমেশিনের
অযৌন শিরদাঁড়ায় টিক টিক শব্দঘন্টা হয়ে।
(তিন)

এরকম আরো আরো কবিতাংশ উদ্ধৃত করতে ইচ্ছে করছে৷ এই কবিতাগুলো পড়তে শুরু করলে এমনই ঘোর তৈরি হয়, যা থেকে মুক্তি পাওয়া দুষ্কর৷ আমার ধারণা, এ বইটি ক্ল্যাসিক কবিতার রূপ পেতে পারে৷ শঙ্খ ঘোষের ‘গান্ধর্ব কবিতাগুচ্ছ’, উৎপলকুমার বসুর ‘পুরী সিরিজ’, ভাস্কর চক্রবর্তীর ‘জিরাফের ভাষা’ যেমন রচনার দীর্ঘকাল পরেও আমাদের আচ্ছন্ন করে রাখতে সক্ষম, সাম্য রাইয়ানের ‘লিখিত রাত্রি’ও সেসরকম দীর্ঘকাল পরেও অগ্রসর পাঠককে আচ্ছন্ন করে রাখতে পারবে বলে আমার ধারণা৷ আমি প্রথমবার বইটি পড়ে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না দ্বিতীয় দশকে এত শক্তিশালী কবির আবির্ভাব ঘটেছে৷ নিজেকে ছাড়িয়ে যাবার যে প্রবণতা সাম্যের কবিতায় বিদ্যমান, পরবর্তী কবিতার বইগুলোতেও কবি তাঁর সে সক্ষমতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করবেন এইই প্রত্যাশা৷ চেতনার ক্যানভাসে কবির আঁকা অন্তর্দহনের চিত্র আমাদের বিমোহিত করুক আগামীতেও৷

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *