❏ সাম্য রাইয়ান
যেবছর তাঁর ‘বালিঘর ও প্রতিটি ভোরের গান’ প্রকাশ হলো, তিনি এসেছিলেন অমর একুশে বইমেলায়, আমিও! দেখা হয়ে গেল, সে-ই প্রথমবার৷ আমি দেখলাম শেষ নব্বইয়ের তীব্রতম উজ্জ্বল কবি শাহেদ শাফায়েতকে৷ গতকাল তিনি মারা গেছেন!
কবি শাহেদ শাফায়েত (১৯৬৯–২০২৩) থাকতেন দেবীগঞ্জে৷ ছোটবেলা থেকেই লেখালেখি করতেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করে তিনি কিছুদিন ঢাকায় থাকেন। ১৯৮৯ সালে প্রথম কবিতা পুস্তিকা ‘কোরপাটেলিক’ প্রকাশের পরপরই স্বকীয় কাব্যবৈশিষ্ট্যের গুণে তিনি বোদ্ধা পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হন৷ প্রথম কাব্যের দীর্ঘ বিরতির পর ১৯৯৯ সালে ‘তোমার জৌলুশমাখা প্রতিটি ভোরের গান’, ২০১১ সালে ‘বালিঘর ও প্রতিটি ভোরের গান’, ২০২১ সালে ‘চরকা কাটার গান’ প্রকাশিত হয়৷
তিনি লেখালিখির পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে ছোটকাগজ সম্পাদনা করেছিলেন; যেমন— শিল্প-সাহিত্যের ছোটকাগজ ‘পূর্ণদৈর্ঘ’, ছাড়পত্র ‘রংতুলি’, কবিতাপত্র ‘করাত’, নতুনদের কবিতাপত্র ‘বৈশাখে’।
কবিতার পাশাপাশি তিনি নাটকও রচনা করেছেন। তাঁর নতুন কবিতা আর নতুন চিত্রকল্প আমাদেরকে বুঁদ করে রাখতে সক্ষম৷ মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে অন্যান্য শিল্প মাধ্যমের সাথে বাঙলা সাহিত্যেরও রূপ-বদল ঘটেছে৷ অল্প সাহিত্যিকেরই প্রভাব আছে তাতে৷ বাকীসব তো গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসানো; এখনো লিখে চলেছে পুরনো আমলের ট্র্যাশ৷ কিন্তু নব্বইয়ের প্রারম্ভেই শাহেদ শাফায়েতের প্রজন্মের গুটিকতক কবি বাঙলা কবিতার গতিমুখ পরিবর্তনে চাপসৃষ্টিকারীর ভূমিকা রাখতে পেরেছিলেন৷
শাফায়েতের কবিতায় যেমন উঠে আসে নিশিকান্ত রাজপুত্র, তেমনি উঠে আসে শহর, গঞ্জ-গ্রাম! প্রকৃতির সৌন্দর্যময়তার শাশ্বত রূপ আর মানুষের নিরন্তর সংগ্রাম যেন একই মোহনায় মিলিত হয়ে ভাষা পেয়েছে তাঁর কবিতায়৷ এখানেই তিনি তাঁর সময়ের প্রচলিত ধরনের চেয়ে একদমই আলাদা৷
তাঁর কবিতায় উঠে এসেছে বাঙালি সংস্কৃতি-সংগ্রামের নানা অনুষঙ্গ…। কখনো বাঙলার রূপকথা, কখনো মহাভারত থেকে চরিত্রেরা এসে ঠাঁই পেয়েছে তাঁর কবিতায়। তাঁর নান্দনিক শিল্পকুশলতা শিল্পসুলভভাবে হৃদয়গহীনকে স্পর্শ করে৷ যা শুধু আবেগ বা অনুভূতি দিয়ে কিংবা মেধা বা ভাষার সৌন্দর্য দিয়ে কিংবা শুধুই দায়বদ্ধতা দিয়ে হয় না৷ সাহিত্য তো এসব ছাড়িয়েও অন্যকিছু৷
[শাহেদ শাফায়েত প্রয়াণের পরদিন লেখা৷]